সুমন মাহমুদ শেখ নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি-সারাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের কথা সবারই জানা। দেশে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন নেহায়াতই কম। সরকার চড়া দামে বিদ্যুৎ আমদানি করে ভর্তুকি দিয়ে চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের ঘাটতি আরও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মাত্রাও। বৈধ সংযোগের জন্যেও অনেক খড়কুটো পুড়াতে হয়, তবুও মিলে না কাঙ্ক্ষিত সেচের সংযোগ। এ অবস্থাতেও থেমে নেই নেত্রকোনা পি.বি.এস’র আওতাধীন মোহনগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি। সাধারণ মানুষ ও কৃষকের প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়ে পল্লীবিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চলছে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত সংযোগ স্থাপনসহ অসংখ্য দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি ও হয়রানির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের পরেও বন্ধ হচ্ছে না পল্লীবিদ্যুতের দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়ন। পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতির এ লাগাম টেনে ধরবে কে? ওদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আর.ই.বি’র প্রতি সাধারণ মানুষের এ প্রশ্ন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় –
মোহনগঞ্জ উপজেলার ৫ নং সমাজ সহিলদেও ইউনিয়নের রামজীবনপুর ব্রিজ সংলগ্ন মেদি পাথরকাটা গ্রামে জনৈক কৃষকের বাড়ির সামনে সেডবিহীন গোয়াল ঘরের পাশে একটি সেচের মিটার স্থাপন করা রয়েছে। মিটার থেকে আরও অনেকটা দূরে কলা গাছসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের খুব নীচ দিয়ে গোয়াল ঘরের একটু উপর দিয়ে চলে গেছে মিটারের সংযোগ ক্যাবল বাড়ির পেছনে। যা অফিসিয়াল নিয়মবহির্ভূত ও সম্পূর্ণ অবৈধ। লাইনটি খুব স্পর্শকাতর ও অনিরাপদ। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মিটারের গ্রাহক মো. জুয়েল আকন্দের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- ‘মিটারটি অফিস কর্তৃপক্ষ এভাবেই দিয়েছেন’। খুটি থেকে ১৩০ ফিট দূরত্বের মধ্যে মিটার সংযোগ ও বোরিং দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে মিটার ও বোরিংয়ের দূরত্ব প্রায় ২০০ ফিট
দূরে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ইঞ্জিনিয়ার ও ওয়্যারিং ইন্সপেক্টর কীভাবে এই মিটারটি অনুমোদন করে? আবার যে জায়গায় মিটারটি স্থাপন করা রয়েছে সে জায়গাটিও উল্লেখিত গ্রাহকের নিজস্ব নয়। তাহলে কর্তৃপক্ষ কীসের ভিত্তিতে এ মিটার অনুমোদন করলেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে টাকা হলে কোন নিয়ম নীতির দরকার হয় না।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, খুটি থেকে বোরিংয়ের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায়
ইঞ্জিনিয়ার ও ওয়্যারিং ইন্সপেক্টরের পরামর্শে নির্দিষ্ট দূরত্বের ভিতরে অর্থাৎ বর্তমানে স্থাপিত মিটারের পাশে একটি ফলস বোরিং দেখানো হয়েছিল। যাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে বাতিল না হয়। মিটার সংযোগ পাওয়ার পর বোরিং সরিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তর করা হয়। যা ইঞ্জিনিয়ার ও ওয়্যারিং পরিদর্শক সম্পূর্ণ অবগত আছেন, যদিও অফিসিয়ালভাবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। গত কিছুদিন আগেও অবৈধ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করা হলে এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং এসবের আলামত নিশ্চিহ্ন করার মানসিকতায় শুধু সংযোগটি রিমুভ করে অফিসে নিয়ে আসেন। এ রিপোর্ট লেখার প্রাক্কালে মোহনগঞ্জ জোনাল অফিসের ডি.জি.এম’র সাথে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারপর এ.জি.এম. কম’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন- এগুলোর লিখিত কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। অথচ তিনি আগের রিপোর্টের প্রেক্ষিতেও আজ পর্যন্ত কোন অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেননি। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও ওয়্যারিং পরিদর্শক বহাল তবিয়তে আছেন।